শাসক হিসাবে শেরশাহের কৃতিত্ব আলোচনা করো Discuss Sher Shah's achievements as a ruler


Discuss Sher Shah's achievements as a ruler


🔶 শাসক হিসাবে শেরশাহের কৃতিত্ব আলোচনা করো।


ভূমিকা : ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ রাজাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শেরশাহ। তিনি মাত্র পাঁচ বছর (১৫৪০-১৫৪৫ খ্রি.) রাজত্ব করেছিলেন। এই অল্প সময়ের রাজত্বকালে তিনি শাসনকার্যের বিভিন্ন বিষয়ে  অসামান্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে শেরশাহ ছিলেন একজন মৌলিক প্রতিভা সম্পন্ন শাসক।


শাসনব্যবস্থা : শেরশাহ তাঁর শাসনব্যবস্থাকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। এগুলি হল কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ও প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা। 


কেন্দ্রীয় শাসনব্যকথা: কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় সম্রাট ছিলেন সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী। তাঁর অধীনে চারজন মন্ত্রী শাসনকার্য পরিচালনা করত। এরা হলেন দেওয়ান-ই-উজিরাত, দেওয়ান-ই আর্জ, দেওয়ান-ই-রিয়াসাত এবং দেওয়ান-ই-ইনসা। বিচারবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন দেওয়ান-ই-কাজি।


প্রাদেশিক শাসনব্যকথা: শেরশাহ শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তার পুরো সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে ভাগ করেন। প্রতিটি সরকারকে তিনি আবার কয়েকটি পরগনায় বিভক্ত করেন। প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব ছিল শিকদার, মুনসেফ, কাজির ওপর। পরগনার শাসনকার্য পরিচালনার ভার ছিল পাটোয়ারি, চৌধুরি মুকাদ্দম প্রভৃতি রাজকর্মচারীর ওপর। পরগনাগুলি আবার গ্রামে বিভক্ত ছিল।


রাজস্ব ব্যবস্থা : শেরশাহ রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কতকগুলি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি জমি জরিপের ব্যবস্থা করেন এবং জমির উর্বরতা শক্তির ওপর নির্ভর করে জমিগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। জমিতে উৎপন্ন ফসলের ওপর এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ রাজস্ব ঠিক করা হয়। শেরশাহ কৃষকদের কাছ থেকে জমির রাজস্ব দেওয়ার অঙ্গীকার স্বরূপ 'কবুলিয়ত’ এবং জমির ওপর কৃষকের অধিকার-স্বরূপ সরকার কর্তৃক 'পাট্টা' দেওয়ার প্রচলন করেন। অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টিজনিত কারণে ফসে ক্ষতি হলে ভূমিরাজস্ব মকুবের ব্যবস্থাও ছিল।


বিচার ব্যবস্থা : দেশের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শেরশাহ একটি সুন্দর বিচারব্যবস্থা চালু করেন। তাঁর বিচারব্যবস্থা ছিল কঠোর ও নিরপেক্ষ। সকলকেই সমান চোখে দেখা হত। সম্রাট ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক। ফৌজদারি বিচারের ভার ছিল শিকদারের ওপর এবং দেওয়ানি মামলার ভার ছিল মির আদল ও কাজির ওপর।


সামরিক সেনাবাহিনী : শেরশাহ সেনাবাহিনীর মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করা হত। তিনি সেনাবাহিনীতে দাগ, হুলিয়া প্রভৃতি প্রথাগুলি চালু করে সেনাবাহিনীর দুর্নীতি দূর করার চেষ্টা করেছিলেন।


প্রজাকল্যাণ :শেরশাহ ছিলেন একজন প্রজাকল্যাণকামী শাসক। তিনি প্রজাদের সুবিধার জন্য অনেক রাজপথ নির্মাণ করেন। পথিকদের সুবিধার্থে রাস্তার ধারে বৃক্ষরোপণ এবং সরাইখানা তৈরি করেন। তাঁর নির্মিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাস্তাটি হল গ্রান্ড ট্রাংক রোড যা বর্তমান বাংলাদেশের সোনারগাঁও থেকে বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ার পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ মাইল বিস্তৃত। তিনি দ্রুত সংবাদ আদান প্রদানের জন্য ঘোড়ার পিঠে ডাকের ব্যবস্থা করেন।


উপসংহার: শেরশাহ তাঁর মাত্র পাঁচ বছরের রাজত্বকালে শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা পরবর্তীকালে অন্যান্য সম্রাটদের পথনির্দেশকস্বরূপ ছিল। প্রজাহিতৈষী ও ধর্মনিরপেক্ষ শাসক হিসাবেও তিনি অমরত্ব দাবি করতে পারেন।

Post a Comment

0 Comments