পদার্থ ও শক্তি
⏩ শক্তির সংজ্ঞা দাও। শক্তির বিভিন্ন রূপ কী কী? উদাহরণ দাও।
Ans. শত্তি কোনো বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি (Energy) বলে।
কোনো বস্তু দ্বারা সম্পাদিত কাজই ওই বস্তুর শক্তির পরিমাপ। অর্থাৎ, কাজ ও শক্তির একক অভিন্ন। শক্তির রূপান্তর আছে, কিন্তু ক্ষয় নেই। শক্তির বিভিন্ন রূপ : পদার্থই শক্তির বাহক। শক্তির প্রভাবে পদার্থের বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ করে শক্তিকে প্রধানত আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যেমন : (i) যান্ত্রিক শক্তি, (ii) তাপ শক্তি, (iii) আলোক শক্তি, (iv) শব্দ শক্তি,(v) চৌম্বক শক্তি, (vi) তড়িৎ শক্তি, (vii) রাসায়নিক শক্তি এবং (viii) পারমাণবিক শক্তি।
■ উদাহরণ:
🔸 যান্ত্রিক শক্তি : কোনো বস্তুর যান্ত্রিক কাজ করার সামর্থ্যকে তার যান্ত্রিক শক্তি বলে। কোনো গতিশীল বস্তু স্থির হওয়ার আগে কিছু কাজ করতে পারে। যেমন, পাহাড়ি নদীর জল যখন উঁচু স্থান থেকে নীচে নামতে থাকে, তখন যান্ত্রিক শক্তি লাভ করে। যার ফলে ওই জলপ্রবাহ ভারি পাথরখণ্ডকেও একস্থান থেকে অন্যস্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
🔸 তাপশক্তি: তাপের সাহায্যে অনেক রকমের কাজ করা যায়। যেমন, স্টিম ইঞ্জিনে তাপের সাহায্যে জলকে বাষ্পে পরিণত করা হয় এবং ওই বাষ্পের চাপে রেল ইঞ্জিন চলে। পেট্রোল, ডিজেল প্রভৃতি জ্বালানি পুড়িয়ে যে তাপ পাওয়া যায়, তা থেকে মোটর গাড়ি, এরোপ্লেন প্রভৃতি চালানো হয়। সুতরাং তাপ এক প্রকার শক্তি।
🔸আলোক শক্তি: আলোেক এক ধরনের শক্তি। কোনো বস্তুর উপর তীব্র সূর্যালোক পড়লে বস্তু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বস্তুটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তনে আলোক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
🔸শব্দ শক্তি: প্রচণ্ড শব্দে অনেক সময় জানলার কাচ ভেঙে যায়। শব্দ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের জন্যই এরকম ঘটে। সুতরাং শব্দ একপ্রকার শক্তি।
🔸চৌম্বক শক্তি : একটি দণ্ড -চুম্বকের মেরুকে লোহার তৈরি একটি পিনের কাছে আনলে দেখা যায় যে, পিনটি চুম্বকটির মেরুর দিকে চলতে শুরু করেছে। অর্থাৎ, তখন চৌম্বক শক্তির ফলেই পিনে যান্ত্রিক শক্তির সৃষ্টি হয়। সুতরাং, চৌম্বক একপ্রকার শক্তি।
🔸তড়িৎ শক্তি: তড়িৎ শক্তির সাহায্যে বিভিন্ন কাজ করা হয়। যেমন, রেলগাড়ি চালানো হয়, পাখা ঘোরানো হয়, আলো জ্বালানো হয়। এ সব কাজ থেকে তড়িৎ শক্তির অস্তিত্ব বোঝা যায়। তাই, তড়িং একপ্রকার শক্তি।
🔸রাসায়নিক শক্তি : রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে। যেমন, চুনে জল ঢাললে চুন ফুটতে শুরু করে এবং তাপ উৎপন্ন হয়। এখানে চুন ও জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কলিচুন পাওয়া যায় এবং রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
🔸পারমাণবিক শক্তি : ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, প্লুটোনিয়াম প্রভৃতি ভারি মৌলের পরমাণু কেন্দ্রককে বিভাজিত করলে উৎপন্ন অংশগুলির মোট ভর আদি মৌলের ভর থেকে কম হয়। এই বিলুপ্ত ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিপুল পরিমাণ শক্তির সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াকে পারমাণবিক বিভাজন (Nuclear fission) বলে।
এছাড়া একাধিক হালকা পরমাণুর (যেমন: হাইড্রোজেন পরমাণু কেন্দ্রককে সংযুক্ত করে একটি অপেক্ষাকৃত ভারি পরমাণুর (যেমন : হিলিয়াম) পরমাণু কেন্দ্রক গঠন করলেও প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াকে পারমাণবিক সংযোজন (Nuclear fusion) বলে।
পারমাণবিক বিভাজন ও সংযোজন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তিকে পারমাণবিক শক্তি বলে।