পদার্থের ভৌত ধর্ম |
পদার্থের ভৌত ধর্ম:
যে ধর্ম থেকে পদার্থের বাহ্যিক অবস্থা ও গুণের পরিচয় পাওয়া যায়, তাকে পদার্থের ভৌত ধর্ম বলে। পদার্থের ভৌত অবস্থা (কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়), বর্ণ, স্পর্শ, স্বাদ, গন্ধ, ঘনত্ব, দ্রাব্যতা, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, চুম্বকত্ব, তাপ ও তড়িৎ পরিবাহিতা প্রভৃতি হল পদার্থের ভৌত ধর্ম।
• ভৌত ধর্মের সাহায্যে পদার্থের শনাক্তকরণ।
(i) ভৌত অবস্থা:
সাধারণ অবস্থায় বিভিন্ন পদার্থের বিভিন্ন ভৌত অবস্থা হয়। যেমন-সাধারণ অবস্থায় লোহা, তামা, সোনা, গন্ধক, চক প্রভৃতি কঠিন পদার্থ; জল, অ্যালকোহল, ব্রোমিন, পারদ, পেট্রোল প্রভৃতি তরল; আবার, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ।
(ii) বর্ণ:
বর্ণ বা রং দেখে কতকগুলি পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন-ভুঁতে নীল, চকের গুঁড়ো সাদা, সোনা উজ্জ্বল হলুদ, রুপা সাদা, তামা লালচে, জল বর্ণহীন, পারদ উজ্জ্বল চকচকে হাইড্রোজেন বর্ণহীন গ্যাস, ক্লোরিন সবুজাভ হলুদ, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের রং বাদামি।
(iii) গন্ধ:
গন্ধের সাহায্যে অনেক পদার্থ চেনা যায়। বিভিন্ন পদার্থের গন্ধ বিভিন্ন। বেঞ্জিন, পেট্রোল, কেরোসিন প্রভৃতি তরল পদার্থকে ওদের বিশেষ গন্ধের জন্য চেনা যায়। অ্যালকোহলের গন্ধ মিষ্টি, জল গন্ধহীন। ন্যাপথলিন, কপূর, ফসফরাসকেও গন্ধ দিয়ে শনাক্ত করা যায়। হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি গ্যাস গম্বহীন; অ্যামোনিয়ার গন্ধ ঝাঁজালো, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের গন্ধ পচা ডিমের মতো।
Physical Science |
(iv) স্পর্শ:
হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনেক সময় আমরা অনেক পদার্থকে চিনতে পারি। যেমন- সোডিয়াম, মোম নরম। সোনা, রূপা, তামা, লোহা শক্ত ও কঠিন। গ্রাফাইট পিচ্ছিল, চক খসখসে, আলকাতরা স্পর্শ করলে হাতে লেগে যায়। তেল, জল স্পর্শ করলে হাত ভিজে যায়। গ্লিসারিনে হাত দিলে বোঝা যায় এটি চটচটে পদার্থ।
(২) স্বাদ:
বিভিন্ন পদার্থের বিভিন্ন রকম স্বাদ হয়। যেমন-সাধারণ লবণ নোনতা, কুইনাইন তেতো, চিনি মিষ্টি, আবার অ্যাসিড টক।
(vi) ঘনত্ব:
প্রত্যেক বিশুদ্ধ পদার্থের একটি নির্দিষ্ট ঘনত্ব আছে। ঘনত্ব নির্ণয় করে পদার্থটিকে চেনা যায়। যেমন-4°C উন্নতায় জলের ঘনত্ব 1 গ্রাম/সিসি; পারদের ঘনত্ব 13'6 গ্রাম/সি সি এবং সোনার ঘনত্ব 19 গ্রাম/সি সি।
(vii) দ্রাব্যতা:
বিভিন্ন পদার্থের দ্রাব্যতা বিভিন্ন দ্রাবকে বিভিন্ন হয়। যেমন-খাদ্যলবণ, চিনি জলে দ্রাব্য,কিন্তু চকের গুঁড়ো, গন্ধক জলে অদ্রাব্য। গন্ধক জলে অদ্রাব্য হলেও কার্বন ডাই-সালফাইডে দ্রাব্য। চিনি জলে দ্রাব্য হলেও বেঞ্জিনে অদ্রাব্য। অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড প্রভৃতি গ্যাস জলে খুব দ্রাব্য; আবার, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি গ্যাস জলে খুব সামান্য দ্রাব্য।
viii) গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক:
প্রত্যেক বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক এবং প্রত্যেক বিশৃদ্ধ তরলের নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক আছে। সুতরাং, গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক জানা থাকলে পদার্থটিকে শনাক্ত করা যায়। যেমন-প্রমাণ চাপে কোনো বিশুদ্ধ তরলের হিমাঙ্ক 0°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 100°C হলে বুঝতে হবে তরলটি জল।
(ix) চৌম্বকধর্ম:
বিভিন্ন পদার্থের চৌম্বকধর্ম বিভিন্ন হয়। যেমন-লোহা, নিকেল, কোবাল্ট চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয়, কিন্তু সোনা, রূপা, তামা চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় না। লোহাকে চুম্বকে পরিণত করা যায়, কিন্তু জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুকে চুম্বকে পরিণত করা যায় না।
(x) তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা:
বিভিন্ন পদার্থের তাপ ও তড়িৎ পরিবাহিতা বিভিন্ন। পদার্থের তাপ ও তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের পরিচয় থেকে পদার্থকে চেনা যায়। যেমন-তামা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি তাপের উত্তম পরিবাহী। আবার, কাঠ, কাচ, রবার, জল তাপের কুপরিবাহী। সোনা, রূপা, তামা, লবণের জলীয় দ্রবণ তড়িতের সুপরিবাহী। আবার, কাচ, কাঠ, রবার, এবোনাইট তড়িতের কুপরিবাহী