দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি : দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা ও বিশ্লেষণের সনাতন বা সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলেন প্লেটো, অ্যারিস্টট্ল, মেকিয়াভেলি, হস, লক্, রুশো, কান্ট, হেগেল, গ্রিন, ব্রাড়লে, বোসাংকে প্রমুখ।
দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
(i) এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা রাষ্ট্র তথা রাজনৈতিক জীবনের বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনার পরিবর্তে কাল্পনিক চিন্তা ও পূর্ব-সিদ্ধান্তের দ্বারা পরিচালিত হয়ে রাজনৈতিক সমস্যা-সংক্রান্ত আলোচনায় আত্মনিয়োগ করতেন।
(ii) তাঁরা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি প্রভৃতিকে লক্ষ্য বলে মনে না করে। সেগুলিকে লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার মাধ্যম হিসেবেই দেখতেন।
(iii) ওইসব দার্শনিক বাস্তব ঘটনা কিংবা প্রকৃত তথ্যাদি অপেক্ষা আত্মদর্শনমূলক (introspective) চিন্তার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করতেন।
(iv) তাঁদের অনুসৃত পদ্ধতি ছিল অবরোহী (deductive)। তাই রাজনৈতিক জীবন বা সমস্যা সম্পর্কে অনুসন্ধানের সময় তাঁরা বাস্তব ঘটনা কিংবা তথ্য প্রমাণের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে পূর্বানুমানের ভিত্তিতে সর্বজনীন সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন।
(v) দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের আলোচনা নীতিমানবাচক হওয়ার ফলে তাতে ন্যায় অন্যায়, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রভৃতি প্রশ্ন অত্যধিক প্রাধান্যলাভ করত।
(vi) তাঁদের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র তথা রাজনৈতিক জীবনের সর্বজনীন মূল্যবোধ নির্ধারণ করা এবং সেই মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে আইন, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক আনুগত্য প্রভৃতি সম্পর্কে বিচারবিশ্লেষণ করা।