Ads Area

অধিকারের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি (Definition and Nature of Rights) - Karmadishari



⏩ অধিকারের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি (Definition and Nature of Rights)


🔸সংজ্ঞা (Definition)

অধিকারের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বোসাংকে বলেছেন, “অধিকার হল সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রযুক্ত দাবি।" বার্কারের মতে, অধিকার হল যথাসম্ভব সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সর্বাধিক পরিমাণ সেইসব বাহ্যিক সুযোগ-সুবিধা, যেগুলি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়। 

সুতরাং, কোনো সুযোগসুবিধা বা দাবিকে তখনই অধিকার বলা যাবে, যদি তা দুটি শর্ত পূরণ করে

(১) এইসব সুযোগসুবিধা বা দাবি প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের সহায়ক হবে এবং 

(২) এটি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হবে। অধ্যাপক ল্যাস্কিও এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, অধিকার হল সমাজজীবনের সেইসব অবস্থা, যেগুলি ছাড়া ব্যক্তির প্রকৃষ্টতম বিকাশ সম্ভব হয় না। সমাজ-সচেতনতা থেকেই অধিকারবোধের উৎপত্তি বলে গিলক্রিস্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন।


🔸প্রকৃতি (Nature)

প্রধানত নিম্নলিখিত দুটি দিক থেকে অধিকারের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে :

(১) অধিকার একটি সামাজিক ধারণা : 

অধিকার হল একটি সামাজিক ধারণা।

কারণ, সমাজজীবনের বাইরে অধিকারের কথা কল্পনাই করা যায় না। গ্রিনের মতে, “পরস্পরের প্রয়োজন সম্পর্কে নৈতিক চেতনাসম্পন্ন সমাজ ছাড়া অধিকারের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। সামাজিক জীব হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজের সুখসুবিধার সঙ্গে সঙ্গে অপরের সুখসুবিধার কথাও ভাবতে হয়। এইভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি যখন পারস্পরিক সুযোগসুবিধা সম্পর্কে সহানুভূতিশীল মনোভাব পোষণ করে, তখনই সমাজে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।


(২) অধিকার একটি আইনগত ধারণা: 

অধিকার হল একটি আইনগত ধারণা।

কারণ, অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হওয়ার ফলে সমাজের মধ্যে সকলের আত্মবিকাশের পথ প্রশস্ত হয়। এদিক থেকে অধিকারকে আইনগত ধারণা বলাই সংগত। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, রাষ্ট্র নাগরিককে কী পরিমাণ অধিকার প্রদান ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, তার ওপর নির্ভর করবে সে কতখানি আনুগত্য তাদের কাছে দাবি করতে পারবে। সুতরাং, রাষ্ট্র অধিকার সৃষ্টি করতে পারে না; তাকে স্বীকার ও সংরক্ষণ করে মাত্র। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত না হলে অধিকারের কোনো নৈতিক ভিত্তি থাকে না—এই যুক্তি মেনে নিতে তিনি রাজি নন। তাঁর মতে, জনগণের এমন কতকগুলি ন্যায়সংগত দাবি থাকে, যেগুলি রাষ্ট্র স্বীকার করে না। কিন্তু সেইসব অধিকারকে মূল্যহীন বা ভিত্তিহীন বলে কোনোমতেই বলা যায় না। তিনি মনে করেন যে, কতকগুলি স্বীকৃত এবং কতকগুলি অস্বীকৃত অথচ স্বীকারযোগ্য অধিকারসমষ্টির মাঝে রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকে। স্বীকারযোগ্য অধিকারগুলিকে রাষ্ট্র যতখানি স্বীকৃতি দিতে পারবে, ততখানি সে তার অস্তিত্বের সার্থকতা প্রতিপন্ন করতে সক্ষম হবে। কিন্তু শ্রেণিবিভক্ত সমাজে স্বার্থের সংঘর্ষ অনিবার্যভাবে অধিকারের প্রশ্নে বিরোধ সৃষ্টি করে। একদিকে যেমন ধনিক শ্রেণি মুনাফা লাভ করার অবাধ অধিকার দাবি করে, অন্যদিকে তেমনি শ্রমিকশ্রেণি উপযুক্ত মজুরি দাবি করে। এরূপ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র শ্রেণি-নিরপেক্ষভাবে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার রক্ষা করতে পারে না। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মানুষের অধিকারের সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়। তাই ধনতান্ত্রিক সমাজে নীতি হিসেবে স্বীকৃত হলেও মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

Tags
রাষ্ট্রবিজ্ঞান

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad